সোনা, তার সৌন্দর্য এবং দামের জন্য, গহনা তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান। তবে সোনা কত ক্যারেটের হবে তা নির্ভর করে গহনার ধরণ, গুণগত মান এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনের উপর। আসুন জানি, গহনার জন্য কত ক্যারেট সোনা ভালো এবং বাংলাদেশে কোন ক্যারেটের সোনা বেশি প্রচলিত।
সোনার ক্যারেট কী এবং তা কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
সোনার ক্যারেট (Karat বা K) সোনার বিশুদ্ধতার একক। ২৪ ক্যারেট (২৪K) হল একদম বিশুদ্ধ সোনা। তবে বিশুদ্ধ সোনা নরম এবং নমনীয় হওয়ায় এটি গহনা তৈরিতে খুব কম ব্যবহার হয়। তাই গহনার টেকসই ও শক্তিশালী করতে সোনার সাথে কিছু অনুষঙ্গ ধাতু (যেমন তামা, রুপা, নিকেল) মিশ্রিত করা হয়।
সোনার ক্যারেটকে মোট ২৪ অংশে ভাগ করা হয়।
- ২৪ ক্যারেট সোনা: ১০০% বিশুদ্ধ সোনা
- ২২ ক্যারেট সোনা: ৯১.৬% বিশুদ্ধ সোনা
- ১৮ ক্যারেট সোনা: ৭৫% বিশুদ্ধ সোনা
- ১৪ ক্যারেট সোনা: ৫৮.৩% বিশুদ্ধ সোনা
গহনার জন্য কত ক্যারেট সোনা ভালো?

গহনার উপযোগিতা এবং স্থায়িত্বের জন্য সাধারনত ২২ ক্যারেট এবং ২১ ক্যারেট সোনা ব্যবহৃত হয়।
২২ ক্যারেট সোনা:
এটি গহনার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়, কারণ এতে সোনার উজ্জ্বলতা এবং বিশুদ্ধতা বজায় থাকে বিয়ের গহনা ও অলংকার তৈরিতে এটি বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে এটি নরম হওয়ায় খুব ভারী কাজের জন্য ব্যবহার অনুপযুক্ত।
২১ ক্যারেট সোনা:
টেকসই এবং শক্তিশালী হওয়ার কারণে এটি আধুনিক ডিজাইনের গহনার জন্য বেশি উপযোগী রিং, ব্রেসলেট বা জটিল নকশার জন্য এটি জনপ্রিয়। দামও তুলনামূলকভাবে কম।
বাংলাদেশে প্রচলিত সোনার ক্যারেট
বাংলাদেশে সাধারণত ২২ ক্যারেট সোনা বেশি প্রচলিত। বাজারে “হলমার্ক সোনা” নামে এটি পরিচিত। এছাড়াও ২১ ক্যারেট, ১৮ ক্যারেট সোনাও পাওয়া যায়।
বাজারে সোনার ক্যারেটের ধরন অনুযায়ী দাম:
২২ ক্যারেট: বিয়ের গহনা এবং সাধারণ অলংকারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়।
২১ ক্যারেট: কিছুটা কম বিশুদ্ধ কিন্তু ভালো মানের।
১৮ ক্যারেট: আধুনিক ডিজাইনের জন্য ব্যবহৃত।
বাংলাদেশে সোনার গহনার ঐতিহ্য
বাংলাদেশে সোনা কেবল গহনা বা অলংকার নয়, এটি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি অংশ বিয়ের সময় নববধূর জন্য ভারী সোনার গহনা একটি সাধারণ প্রথা। বিশেষ দিন বা উৎসবে সোনার গহনা কেনার চল রয়েছে। পরিবারে সোনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তর করা হয়, যা পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতীক।
গহনার জন্য সোনা কেনার আগে যা মাথায় রাখতে হবে
সোনা কেনার সময় শুধু ক্যারেট বা বিশুদ্ধতা দেখা যথেষ্ট নয়। আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে যাতে আপনার বিনিয়োগ সঠিক হয় এবং আপনি মানসম্পন্ন পণ্য পান।
আরও পড়ুনঃ স্বর্ণ কি, এই ধাতু কেন এতো মূল্যবান | স্বর্ণ আমাদের কি কি কাজে ব্যবহৃত হয়
হলমার্ক সনদ
হলমার্ক সনদ সোনার বিশুদ্ধতার প্রমাণ। হলমার্ক সনদ প্রাপ্ত সোনা কেনাই সবচেয়ে নিরাপদ। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি আসল মানের সোনা কিনছেন।
দাম নির্ধারণ
সোনার দাম প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়। বাজারের বর্তমান সোনার মূল্য জেনে নিন এবং নিশ্চিত করুন যে দোকান আপনাকে সঠিক মূল্য দিচ্ছে।
- ২২ ক্যারেটের দাম তুলনামূলক বেশি।
- ১৮ ক্যারেট বা ২১ ক্যারেট সোনা কিছুটা সাশ্রয়ী।
ওয়েস্টেজ এবং মেকিং চার্জ
গহনার ক্ষেত্রে মেকিং চার্জ এবং ওয়েস্টেজ (ওজনের অপচয়) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- দোকানগুলো সাধারণত মেকিং চার্জ হিসাবে ১০%-২০% পর্যন্ত চার্জ নিতে পারে।
- এই চার্জ সম্পর্কে স্পষ্ট জেনে নিন এবং দরদাম করুন।
ডিজাইন এবং ওজন
গহনার ডিজাইন এবং ওজনের উপর দাম নির্ভর করে। ভারী গহনার ক্ষেত্রে দাম বেশি হয়।
- হালকা ডিজাইনের গহনা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক।
- বিয়ের গহনার জন্য ভারী ডিজাইন জনপ্রিয়।
পুনরায় বিক্রয়মূল্য (Resale Value)
সোনা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। গহনা কেনার সময় এর পুনরায় বিক্রয়মূল্য সম্পর্কে জানতে হবে।
- সাধারণত ২২ ক্যারেট সোনার পুনরায় বিক্রয়মূল্য বেশি।
- হলমার্কযুক্ত গহনার ক্ষেত্রে বিক্রয়মূল্যে সুবিধা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে আজকের সোনার দামঃ
সোনার দামের পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাজারের সোনার দামের উপর নির্ভর করে, যা প্রতি গ্রাম সোনার মূল্য নির্ধারণ করে। সোনার দাম বাড়া বা কমা আন্তর্জাতিক বাজারের সোনার দামের উপর নির্ভর করে।
সোনার দামের সর্বশেষ আপডেট পেতে, আপনি নিচের টেবিল দেখুন। সেখানে বাংলাদেশে আজকের প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ১৮ ক্যারেট সোনার দামের লাইভ আপডেট দেওয়া হয়েছে।
সোনা | বিবরণ | মূল্য (প্রতি ভরি) |
---|---|---|
২২ ক্যারেট সোনা | ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা) | ১৭২,৫৪৫.৫৫ টাকা |
২১ ক্যারেট সোনা | ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা) | ১৬৪,৬৯৫.৬৮ টাকা |
১৮ ক্যারেট সোনা | ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা) | ১৪১,১৬৯.৩৯ টাকা |
সনাতনি পদ্ধতি | প্রথাগত সোনা | ১১৬,৭৭৯.৯৭ টাকা |
সুত্র: বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (BAJUS)
শেষ কথা:
সঠিক ক্যারেটের সোনা কেনা শুধু গহনার সৌন্দর্য নয়, বরং এটি একটি স্মার্ট বিনিয়োগও। বাংলাদেশের বাজারে ২২ ক্যারেট সোনা সবচেয়ে জনপ্রিয়, তবে দৈনন্দিন ব্যবহার এবং আধুনিক ডিজাইনের জন্য ২১ ক্যারেট সোনা একটি চমৎকার বিকল্প।
আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী সোনা কেনার সিদ্ধান্ত নিন এবং অবশ্যই সোনার গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। সঠিক পরিকল্পনা এবং জ্ঞান দিয়ে আপনার কেনাকাটা আরও উপভোগ্য এবং নিরাপদ করতে পারেন।
আপনার মন্তব্য বা প্রশ্ন জানাতে আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখুন। আমরা দ্রুত সময়ের ভিতরে আপনার কমেন্টের উত্তর দিবো।
সোনার গহনা সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs):
গহনার জন্য কোন ক্যারেটের সোনা সবচেয়ে ভালো?
গহনার জন্য সাধারণত ২২ ক্যারেট সোনা সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি যথেষ্ট বিশুদ্ধ এবং উজ্জ্বল। তবে টেকসই গহনার জন্য ২১ ক্যারেট সোনাও ভালো একটি বিকল্প।
২৪ ক্যারেট সোনা কি গহনার জন্য ব্যবহার করা যায়?
না, ২৪ ক্যারেট সোনা গহনার জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ এটি খুবই নরম। এটি সাধারণত বিনিয়োগের জন্য সোনার বার বা কয়েনে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে সোনার দাম কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
বাংলাদেশে সোনার দাম আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) প্রতিদিন সোনার দাম নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশে কোন ক্যারেটের সোনা বেশি জনপ্রিয়?
বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট সোনা সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া ২১ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট সোনাও প্রচলিত।
পুনরায় বিক্রয়ের সময় কীভাবে সোনার মূল্য নির্ধারণ হয়?
সোনার ওজন, ক্যারেট এবং বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী পুনরায় বিক্রয়ের সময় মূল্য নির্ধারণ করা হয়। হলমার্কযুক্ত সোনার ক্ষেত্রে দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।
সোনার গহনার সাথে কোন ধাতু মেশানো হয়?
সোনাকে শক্তিশালী এবং টেকসই করার জন্য তামা, রুপা, নিকেল বা জিঙ্ক মেশানো হয়। এটি সোনার ক্যারেট কমিয়ে দেয়।