১৮ ক্যারেট সোনার দাম কত | 18 Karat Gold Price In Bangladesh

সোনা যুগে যুগে সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র অলংকারের উপাদান নয়, বরং বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সোনার মান ক্যারেটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, যা সোনার খাঁটি অংশের পরিমাণকে নির্দেশ করে।

১৮ ক্যারেট সোনা হল এমন একটি ধরনের সোনা যা ৭৫% খাঁটি সোনা এবং ২৫% অন্যান্য ধাতু দিয়ে তৈরি। এটি মজবুত এবং টেকসই হওয়ার পাশাপাশি দামে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সোনার দামের ওঠানামা বিভিন্ন কারণে ঘটে, যেমন আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তন, স্থানীয় চাহিদা-সরবরাহ, এবং মুদ্রাস্ফীতি। এই প্রবন্ধে, আমরা ১৮ ক্যারেট সোনার দাম, দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া, এবং কেন এটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে তা বিশ্লেষণ করব।

১৮ ক্যারেট সোনা কি?

image 3

সোনার ক্যারেট হল একটি মাপকাঠি, যা সোনার বিশুদ্ধতা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ২৪ ভাগে ভাগ করা হয় এবং একটি সোনার টুকরোতে খাঁটি সোনার পরিমাণকে নির্দেশ করে।

যদি কোনো সোনার অলংকার ২৪ ক্যারেট হয়, তাহলে সেটি ১০০% খাঁটি সোনা। তবে, খাঁটি সোনা খুবই নরম হওয়ার কারণে এটি সাধারণত অলংকার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না। সোনাকে আরও মজবুত করতে এতে অন্যান্য ধাতু (যেমন তামা, রুপা বা প্যালাডিয়াম) মেশানো হয়।

১৮ ক্যারেট সোনার ক্ষেত্রে, এটি ২৪ ভাগের মধ্যে ১৮ ভাগ খাঁটি সোনা এবং বাকি ৬ ভাগ অন্যান্য ধাতু দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ, ১৮ ক্যারেট সোনা ৭৫% খাঁটি সোনা এবং ২৫% মিশ্রিত ধাতু নিয়ে গঠিত। এটি মজবুত হওয়ার পাশাপাশি উজ্জ্বল রঙ ধরে রাখে, যা একে অলংকারের জন্য আদর্শ করে তুলেছে।

আজকের ১৮ ক্যারেট সোনার দাম কত বাংলাদেশে

বাংলাদেশে সোনার দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম, স্থানীয় চাহিদা-সরবরাহ, এবং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ফি ভূমিকা রাখে। ১৮ ক্যারেট সোনা, যা ৭৫% খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি, সাধারণত ২২ এবং ২৪ ক্যারেট সোনার তুলনায় কিছুটা কম দামে পাওয়া যায়।

বর্তমানে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সোনার দাম নির্ধারণ করে, যা দেশের জুয়েলারি দোকানগুলো মেনে চলে। ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরিতে (১১.৬৬ গ্রাম) আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামার সাথে মিল রেখে পরিবর্তিত হয়।

১৮ ক্যারেট সোনার দাম (প্রতি ভরি):

আজকের তারিখ: ০৮ জুন ২০২৫

সোনাবিবরণমূল্য (প্রতি ভরি)
২২ ক্যারেট সোনা

ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা)

১৭২,৩৩৫.৬০ টাকা
২১ ক্যারেট সোনা

ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা)

১৬৪,৪৯৭.৩৯ টাকা
১৮ ক্যারেট সোনা

ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা)

১৪০,৯৯৪.৪৩ টাকা
সনাতনি পদ্ধতি

প্রথাগত সোনা

১১৬,৬৪০.০০ টাকা

সুত্র: বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (BAJUS)

আজকের ১৮ ক্যারেট প্রতি আনা স্বর্ণের দাম

নিচের টেবিলে বাংলাদেশে আজকের প্রতি আনা সোনার দাম দেওয়া হল। ২২ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ১৮ ক্যারেট ও সনাতনী পদ্ধতিতে সোনার দামের লাইভ আপডেট প্রতি আনা হিসাবে মুল্য দেওয়া হল।

আজকের তারিখ: ০৮ জুন ২০২৫

সোনাবিবরণমূল্য (প্রতি আনা)
২২ ক্যারেট সোনা

ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা)

১০,৭৫৬.২০ টাকা
২১ ক্যারেট সোনা

ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা)

১০,২৬৬.৯৮ টাকা
১৮ ক্যারেট সোনা

ক্যাডমিয়াম (হলমার্ক সোনা)

৮,৮০০.০৬ টাকা
সনাতনি পদ্ধতি

প্রথাগত সোনা

৭,২৮০.০০ টাকা

সুত্র: বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (BAJUS)

সোনা কেনার সময় যা বিবেচনা করবেন:

  • বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনা: নামী জুয়েলারি দোকান বা বাজুস নিবন্ধিত দোকান থেকে সোনা কেনা উচিত।
  • মজুরি এবং ভ্যাট: মজুরি ও ভ্যাটের কারণে মোট খরচ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।

সোনার দামের প্রতিদিনের আপডেট তথ্য আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ।

১৮ ক্যারেট সোনা কেনার সুবিধা

১৮ ক্যারেট সোনা অলংকার ও অন্যান্য সোনার পণ্যের জন্য একটি জনপ্রিয় পছন্দ। এটি খাঁটি সোনা এবং মিশ্রিত ধাতুর একটি নিখুঁত সমন্বয়, যা একে ব্যবহারিক ও টেকসই করে তোলে। নিচে ১৮ ক্যারেট সোনা কেনার কয়েকটি সুবিধা তুলে ধরা হলো:

টেকসই এবং মজবুত

খাঁটি সোনা (২৪ ক্যারেট) নরম এবং সহজে বাঁকতে বা ভাঙতে পারে। কিন্তু ১৮ ক্যারেট সোনায় মিশ্রিত ধাতু থাকায় এটি আরও টেকসই ও মজবুত হয়, যা প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

চমৎকার উজ্জ্বলতা এবং রঙ

১৮ ক্যারেট সোনা তার সোনালি রঙ এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখে, যা অলংকারকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এতে মিশ্রিত ধাতুর কারণে রঙটি একটু গাঢ় ও উজ্জ্বল হয়, যা অনেকের কাছে পছন্দনীয়।

তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী

১৮ ক্যারেট সোনা ২২ এবং ২৪ ক্যারেট সোনার তুলনায় দামে সাশ্রয়ী। যারা উচ্চমানের সোনা কিনতে চান কিন্তু বাজেট নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।

ডিজাইনের বৈচিত্র্য

১৮ ক্যারেট সোনা মজবুত হওয়ার কারণে এটি বিভিন্ন জটিল ডিজাইনের জন্য উপযুক্ত। জুয়েলারি শিল্পীরা এটি দিয়ে সুন্দর এবং জটিল নকশার অলংকার তৈরি করতে পারেন।

আর্সেনিক ও অ্যালার্জি প্রতিরোধী

অনেকের কাছে খাঁটি সোনা খুব নরম হওয়ায় এটি ত্বকে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে ১৮ ক্যারেট সোনা অ্যালার্জি-সহনশীল, যা ত্বকের জন্য নিরাপদ।

বিনিয়োগের সুযোগ

১৮ ক্যারেট সোনা শুধুমাত্র অলংকার হিসেবেই নয়, বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবেও কার্যকর। সময়ের সাথে সোনার দাম বাড়তে থাকায় এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগ।

রক্ষণাবেক্ষণ সহজ

২৪ ক্যারেট সোনার তুলনায় ১৮ ক্যারেট সোনা বেশি মজবুত হওয়ায় এটি সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ তুলনামূলক সহজ।

১৮ ক্যারেট সোনা তার মজবুত গঠন, সাশ্রয়ী মূল্য এবং চমৎকার নকশার কারণে সোনা প্রেমীদের জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। এটি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যেমন কার্যকর, তেমনি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্যও উপযুক্ত।

পরামর্শ

১৮ ক্যারেট সোনা কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত, যা আপনার কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও ভালো করবে। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:

বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনুন

সোনা কেনার সময় নিশ্চিত করুন যে আপনি কোনো বিশ্বস্ত এবং বাজুস (বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন) নিবন্ধিত দোকান থেকে কিনছেন। এতে খাঁটি সোনা পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।

হলমার্ক দেখে নিন

সোনা কেনার আগে দোকান থেকে অবশ্যই হলমার্ক দেখে কিনুন এবং রশিদ সংগ্রহ করুন এটি ভবিষ্যতে সোনা বিক্রি বা যাচাইয়ের সময় কাজে আসবে।

মজুরি ও ভ্যাট যাচাই করুন

অলংকার তৈরির জন্য দোকানগুলো অতিরিক্ত মজুরি (মেকিং চার্জ) এবং কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট যোগ করে। কেনার আগে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এবং দরদাম করার চেষ্টা করুন।

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের সাথে মিলিয়ে দেখুন

কেনার আগে আন্তর্জাতিক সোনার দাম যাচাই করুন এবং স্থানীয় বাজারের দামের সাথে তুলনা করুন। এতে আপনি বাজারের সঠিক অবস্থান বুঝতে পারবেন।

ডিজাইন এবং গুণগত মান যাচাই করুন

অলংকার বা সোনার পণ্যের ডিজাইন ও গুণগত মান ভালোভাবে দেখুন। এটি আপনার পছন্দ এবং বাজেটের সঙ্গে মানানসই কিনা তা নিশ্চিত করুন।

রিসেল ভ্যালু সম্পর্কে জেনে নিন

যদি আপনি ভবিষ্যতে সোনা বিক্রি করতে চান, তাহলে দোকানটি কত শতাংশ রিসেল ভ্যালু দেয় তা জেনে নিন। কিছু দোকান পুরনো সোনার জন্য বিশেষ ছাড় বা সুবিধা দেয়।

১৮ ক্যারেট সোনা কেনার আগে এই পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনি খাঁটি সোনা কিনতে পারবেন এবং আপনার বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে। বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনাকাটা করুন এবং দামের পাশাপাশি গুণগত মান যাচাই করতে ভুলবেন না।

উপসংহার

১৮ ক্যারেট সোনা তার টেকসই গুণ, সাশ্রয়ী মূল্য এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে সোনা প্রেমীদের জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। এটি অলংকার ব্যবহারের পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্যও উপযুক্ত।

সোনার বাজারের ওঠানামা, স্থানীয় মজুরি ও ভ্যাট, এবং বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সোনার সঠিক মূল্য নির্ধারণে সহায়ক। ১৮ ক্যারেট সোনা কেনার সময় বিশ্বস্ত দোকান থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা, বিল এবং সার্টিফিকেট নেওয়া, এবং বাজার যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যারা সাশ্রয়ী দামে মজবুত এবং সুন্দর অলংকার চান, তাদের জন্য ১৮ ক্যারেট সোনা একটি দারুণ বিকল্প। এটি শুধুমাত্র দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগও হতে পারে।

FAQs: ১৮ ক্যারেট সোনার দাম এবং সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

১৮ ক্যারেট সোনা কী?

১৮ ক্যারেট সোনা এমন একটি সোনা, যার ৭৫% খাঁটি সোনা এবং ২৫% অন্যান্য ধাতু (যেমন রুপা, তামা) দিয়ে তৈরি। এটি মজবুত, টেকসই এবং অলংকার তৈরির জন্য আদর্শ।

১৮ ক্যারেট সোনা কেন সাশ্রয়ী?

১৮ ক্যারেট সোনা ২২ এবং ২৪ ক্যারেট সোনার তুলনায় খাঁটি সোনার পরিমাণ কম থাকায় এটি তুলনামূলকভাবে কম দামে পাওয়া যায়।

১৮ ক্যারেট সোনা টেকসই কিনা?

হ্যাঁ, ১৮ ক্যারেট সোনা টেকসই। এতে মিশ্রিত ধাতুর কারণে এটি খাঁটি সোনার তুলনায় বেশি মজবুত এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য আদর্শ।

১৮ ক্যারেট সোনার রঙ কি খাঁটি সোনার মতো?

১৮ ক্যারেট সোনা খাঁটি সোনার মতো উজ্জ্বল হলেও এতে থাকা মিশ্রিত ধাতুর কারণে রঙ সামান্য গাঢ় হতে পারে।

১৮ ক্যারেট সোনার রিসেল ভ্যালু কেমন?

রিসেল ভ্যালু সোনার খাঁটি পরিমাণ এবং বাজারের বর্তমান দামের উপর নির্ভর করে। ১৮ ক্যারেট সোনার রিসেল ভ্যালু ২২ এবং ২৪ ক্যারেট সোনার তুলনায় কম হতে পারে।

১৮ ক্যারেট সোনা কি ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে?

সাধারণত না। তবে যারা খুব সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী, তাদের মিশ্রিত ধাতুর কারণে অ্যালার্জি হতে পারে।

আমি নাইমা চৌধুরী একজন অভিজ্ঞ স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ এবং স্বর্ণ সম্পর্কিত তথ্য ও বিশ্লেষণে পারদর্শী। আমি GoldBD বাংলা ব্লগে প্রধান লেখক হিসেবে কাজ করছি, স্বর্ণের বাজারদর, বিনিয়োগ পরামর্শ, এবং স্বর্ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছি নিয়মিত। আমার লেখাগুলো সহজ ও তথ্যবহুল, যা পাঠকদের স্বর্ণ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

Leave a Comment